1. info@asiabarta.news : এশিয়া বার্তা :
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ - এশিয়া বার্তা
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা:
জরুরী নিয়োগ চলছে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি,নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন: বার্তা বিভাগ-০১৭১৬৫৫৯১৯০

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ

  • প্রকাশিত: রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৪১৭ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী জেলাপ্রতিনিধি:

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আমিনুল ইসলাম আরো চারজনের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রোগ্রাম ইউনিয়নের বটতলীতে ৪৫ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করছেন। ২০১৭ সালে নরসিংদী থেকে চারা গাছ কিনে এনে তারা প্রথম মাল্টা চাষ শুরু করেন। শুরুতে ২৫ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করলেও এখন তারা ৪৫ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করছেন। তাদের বাগানে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার মাল্টা গাছ আছে।

তার আশা করছেন, এবছর বেশ ভালো দামে তারা মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন।

আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা সব জমিতে পেয়ারা চাষ করতাম। একদিন শুরুতেই হুট করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই মাল্টা চাষ করবো। কারণ আমরা বাণিজ্যিকভাবে যে পেয়ারার আবাদ করতাম সেইসব গাছ তিন বছরের মতো বেঁচে থাকে। আর মাল্টা গাছ একবার লাগালে ২০ বিশ বেঁচে থাকবে। আবার উৎপাদন খরচও কম। কীটনাশক কম লাগে। মাসে একবার দিলেও হয়। এইজন্য মাল্টা চাষ করা। গতবছর দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হলেও দুই বছর ধরে শুধু বিনিয়োগ করেই গেছি আমরা। এবার আশা করছি ভালো বিক্রি করতে পারবো।

তিনি আরো জানান, শুরুতে এক বিঘা জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করলে তারপর পরিচর্যার জন্য যা খরচ পড়ে সেটা শুধু। এর বেশি আর খরচ করতে হয়না। তবে এবছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের ৪০০ টার মতো গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, সেসব আবার নতুনভাবে লাগাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

আমিনুলের মতো এখন শত শত কৃষক রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে গেলেই মাঠকে মাঠ দেশে উদ্ভাবিত মাল্টা চাষ করতে দেখা যাবে কৃষকদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও দেশের এ খাতকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। বাজারে এখন হরহামেশাই দেশী জাতের সবুজ রঙের মাল্টা বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। খুচরা কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে এসব মাল্টা বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ২০১৬ সালের দিকে প্রথম মাল্টা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে জেলায় ১৪৮ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যাতে ফলন হয়েছে ২২২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয় গোদাগাড়ীতে। ১০২ হেক্টর জমিতে সেখানে মাল্টা চাষ হচ্ছে। তবে প্রতিবছর মাল্টার চাষাবাদ বাড়ছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রধানত দেশে উদ্ভাবিত মিষ্টি জাতের বারি মাল্টা-১ চাষাবাদ হচ্ছে।

গোদাগাড়ীর পিরিজপুরের রফিকুল ইসলাম পৌনে দুই বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করছেন। গত বছর মাল্টা বিক্রি করে তার আয় হয়েছে ৫২ হাজার টাকা। এবছর ইতিমধ্যে ৪২ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। জমিতে আরো মাল্টা রয়েছে।

রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালে মাল্টা চাষাবাদ শুরুর পর গতবছর প্রথম ৫২ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। তিনবছর হচ্ছে মাল্টা লাগানো। সময় না হলেও গতবছর খুব একটা মাল্টা উৎপাদন হয়নি। গতবছরের চেয়ে এবছর মাল্টার উৎপাদন ভালো হয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত ১৪ মণ মাল্টা বিক্রি করেছি। ৯০ টাকা কেজি দরে সব মাল্টা ঢাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সব খরচ বাদে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হয়েছে।

গোগ্রামের আরেক চাষী মাহাবুব জানান, তার ২০ বিঘা জমিতে মাল্টার গাছ রয়েছে। পরিপক্ক মাল্টার গাছ রয়েছে ১২৩০টি। যেসব গাছে পুরোদমে মাল্টা ধরবে। গাছ পরিপক্ক না হলেও এবছর ইতিমধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১৫ মণ মাল্টা বিক্রি করেছেন কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। আরো দশ মণের মতো এবছর মাল্টা হবে। তিনি আশাবাদী গাছ পরিপক্ক গাছ থেকে আগামি বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী মাল্টার উৎপাদন হবে।

রাজশাহী সিটি এলাকার নগরপাড়ায় ১৮ কাঠা জমিতে মাল্টা চাষ করছেন সাজ্জাদ হোসেন। গতবছর এই বাগান থেকে ৩০ মণ মাল্টা পেয়েছেন তিনি। এবছর প্রত্যাশা করছেন ৪০ থেকে ৫০ মণ মাল্টা বিক্রি করবেন।

সাজ্জাদ জানান, মাল্টা চাষ করা লাভজনক। তবে তা যত্ন নিয়ে করতে হয়। তবে যত্ন না নিলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যত্ন না নিলে গাছ হলুদ হয়ে মারা যায়।

সাজ্জাদ আরো জানান, মাল্টা গরীবের কমলালেবু। মাল্টায় ভিটামিন সি বেশি থাকা সত্ত্বেও বেশি ক্রেতা পাওয়া যায় না। বিক্রি করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ মাল্টা নিয়ে এখনো জনগণের মধ্যে উন্নাসিকতার ব্যাপার আছে। অথচ মাল্টা বেশি পুষ্টিকর।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, মাল্টা চাষের জন্য খুব সচেতন কৃষক দরকার হয়। কারণ মাল্টা খুব পরিচর্যা করতে হয়। খুব সেনসিটিভ ফল। এইজন্য আমরা সচেতন কৃষকদের মাল্টা চাষের জন্য উদ্ধুব্ধ করি। যত্ন নিতে পারলে এ ফসল চাষাবাদ করে খুব সহজেই লাভবান হওয়া যায়। আমরা মনে করি, যত্ন নিয়ে চাষাবাদ করতে পারলে এ ফসল বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares
আরো সংবাদ পড়ুন

আর্কাইভ | পুরাতন সংবাদ পড়ুন

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: 𝐘𝐄𝐋𝐋𝐎𝐖 𝐇𝐎𝐒𝐓