কেরানীগঞ্জ( ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার কেরানীগঞ্জে যাতায়াতের প্রধান রাস্তার মুখে ৭ফুট উঁচু করে দেয়াল নির্মাণে পাঁচ বাড়ির লোকজনের মুখের হাসি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতে রাস্তায় বের হতে না পেরে ওই পাঁচ বাড়ির লোকজন বন্দী অবস্থায় এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে মডেল থানার কালিন্দী ইউনিয়নের বোরহানী বাগ এলাকায়। বিশ বছর যাবৎ যাতায়াতের এই রাস্তাটি এখন রহস্যজনক ভাবে বন্ধ করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শিমুলের শশুর সামিউল্লাহ হাজীর বিরুদ্ধে।
মেয়ের জামাতা ছাত্রলীগ নেতা শিমুলকে পুজি করে এই অমানবিক কাজে শশুর জড়িয়ে পড়েছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ওই পাঁচ বাড়ির লোকজনের । আজ বুধবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাখা সড়ক থেকে প্রায় ২০টি বাড়ির মালিকরা রাস্তার জন্য উভয় পক্ষ থেকে আড়াই ফুট করে ছেড়ে দেয়া পাঁচ ফুটের নির্মিত একটি রাস্তা। এই রাস্তা দিয়েই ওই পাঁচ বাড়ীর লোকজনসহ সবাই নিয়মিতভাবে ২০ বছর যাবত যাতায়াত করে আসছিল। এই রাস্তার নিচ দিয়ে পাঁচ বাড়ির পয়ঃ নিষ্কাশনের জন্য একটি স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হয়। এই স্যুয়ারেজ লাইনের জন্য ওই পাঁচ বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নেয় ওই ব্যক্তি । এই দেয়ালে আটকে পরা পিছনের পাঁচ বাড়ির মালিকগন হচ্ছেন সোহাগ, আসিক,দেলোয়ার, দুলাল ও ফুজিয়া বেগম। বাড়িতে যাওয়া -আসার একমাত্র রাস্তার মুখে ৭ফুট উঁচু ইটের দেয়ালে আটকে পরায় ভুক্তভোগী বাড়ির লোকজনেরা পাশের বাড়ির ওয়াল টপকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। শিশু থেকে মহিলা কেউ বাদ পরেনি পাশের বাড়ির ওয়াল টপকেতে। এতে পাশের বাড়ির মালিকেরাও বিরক্ত প্রকাশ করছে। কোন রকম মিনতি করে চলছে তাদের দৈনিক জীবন।
আটকে পরা পরিবারের পক্ষে ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তারা স্যুয়ারেজ লাইন ও রাস্তার বাবদ শতাংশ প্রতি ১৩ হাজার টাকা করে১৬০ টি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা আদায় করে নেন ছাত্রলীগ নেতা শিমুল। রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইন চলমান থাকা অবস্থায় উক্ত রাস্তার ওপর পাশের প্লটটি তার ভাতিজি থেকে ক্রয় করে ভয়ংকর হয়ে উঠেন ছাত্রলীগ নেতার শশুর সামিউল্লা হাজী । অমানবিক কাজে লিপ্ত হয়ে প্রথমেই তিনি রাস্তার মুখ বন্ধ করে সেখানে ৭ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করেন । ভুক্তভোগীরা আরো জানান, রাস্তার মুখে দেয়াল নির্মাণ করে অবরোধ করে তাদের বাড়িঘর ও জায়গা জমি অল্প দামে ক্রয় করার জন্য ছাত্রলীগের নেতা শিমুল ও তার শশুর সামিউল্লা হাজী এখন নানা ষড়যন্ত্র করছেন। রাস্তার অভাবে দিশেহারা হয়ে পরা বাড়ির মালিকরা তার কাছে বিক্রি ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না তাদের। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, বিশ বছর যাবৎ এই রাস্তা দিয়ে আমরা চলাচল করে এসেছি। এই রাস্তার জন্যই আমারা কেউ একতলা, কেউ দিতলা, কেউবা আবার বহুতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছি। প্রয়োজনে আমরা রাস্তার জন্য তাকে আরো টাকা দিবো। তবুও আমরা একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকতে চাই।
এই বিষয়ে কথা বললে বোরহানি বাগ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা ছিলো, ওই রাস্তায় সুয়ারেজের কাজও সমাপ্ত হযেছে। আমরা পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন রাস্তার ব্যাপারে একাধিক বার বলেছি কিন্তু শিমুল ও তার শশুর সামিউল্লাহ হাজী মানে না।
এদিকে রাস্তার উপর দেয়াল দিয়ে রাস্তা বন্ধকারী সামিউল্লাহ হাজী মুঠোফোনে জনান, যখন রাস্তা নির্মান করা হয় তখন আমি হজ্বে ছিলাম। আমার মেয়ের জামাতাকে দিয়ে রাস্তা ও সুয়ারেজ লাইন নির্মান কাজ করানো হয়। তখন সে আমার জামাতা ছিলো না। অল্প কিছু দিন যাবৎ সে আমার জামাতা। আমি পাশের প্লটটি ক্রয় করেছি। এখন বুক চিঁড়ে রাস্তা দেওয়া যাবে না। তারা বিকল্প ব্যবস্থা করুক। তাদের রাস্তা দেওয়া আমার দায়িত্ব না।
কালিন্দী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শিমুল বলেন, স্যুয়ারেজের কাজ আমি করেছি। তা আমার ইচ্ছে নয়। এলাকার লোকজন সবাই মিলে আমাকে দাযিত্বভার দিলে আমি তা পালন করি এতে আমার আরো বার লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। রাস্তার বিষয়ে তিনি আরো বলেন তারা কেউই বাড়ি করে রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়েনি, তাদের ব্যবহার অসন্তুষ্ট জনক। তারা আলাদা দাগের বাসিন্দা। তাদের জন্য এই রাস্তা প্রযোজ্য নয়।