নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ঢাকার নবাবগঞ্জে নয়নশ্রী ইউনিয়নের বিলপল্লী এলাকায় জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিলপল্লী এলাকার আবুল কালামের ছেলে শেখ হৃদয়ের সাথে একই এলাকার মোল্লা হাটি গ্রামের মাজেদ ফকির গং দের সাথে বাড়ির পাশের জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। হৃদয়ের পরিবারের দাবি গত ২০ নভেম্বর সকালে সে জায়গায় মাটি কাটতে গেলে হৃদয়ের উপর হামলা করে মাজেদ ফকির গং। এতে গুরুতর আহত হয় হৃদয়। সাথে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও উপর হামলা করে মাজেদ ফকির গং। এসময় হৃদয় ও তার বোনের বাসা থেকে গরু, ছাগল সহ বাড়ির আসবাবপত্র লুটপাটের অভিযোগও উঠে মাজেদ গং এর বিরুদ্ধে। এবিষয়ে নবাবগঞ্জ থানায় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। এদিকে এক মাস পেরিয়ে গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভূক্তভোগী পরিবারটি।
হৃদয়ের বড় বোন শান্তি বলেন, তাদের মামলার একজন আসামীকেও গ্রেফতার করা হয়নি। এছাড়া আগে থানায় গেলেও তাদের মামলাটি পরেনেয়া হয়। বিবাদীপক্ষের মামলাটি আগে নিয়েছে। এবং তাদের মামলা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মারধরের পর হাসপাতালে যাওয়ার পথে স্থানীয় মেম্বার খালেকের উপর বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে গেলেও মাজেদ ফকিরের লোকজন বাড়ির গরু ছাগল সহ সব নিয়ে যায়।
মামলা ও নবাবগঞ্জ ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাজেদ ফকির গং দলিল জালিয়াতি করে সে জায়গার মালিকানা দাবী করে আসছিলেন। শেখ হৃদয় বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ ভূমি অফিসে একটি মিস কেস করেন কেস নং-৩১০/২০১৯ যার আদেশ ৮ই নভেম্বর ২০২০ সালে দেয়া হয়। আর তাতে নবাবগঞ্জ ভূমি অফিস থেকে উল্লেখ আছে সার্বিক পর্যালোচনায় বাদীপক্ষের (শেখ হৃদয়) আর.এস রেকর্ডের সাথে মালিকানার ধারাবাহিকতা সঠিক রয়েছে এবং বিবাদীর ( মাজেদ ফকির) দলিলের সাথে সার্টিফাইড দলিলের কোন মিল নাই। সেহেতু বিবাদীর নামীয় নামজারী কেস নং- ৮৬০২/১৩-১৪ বাতিল করে সমস্ত ভূমি মূল খতিয়ানভুক্ত করার সুপারিশ করা হলো।
একটি হলফ নামার কপি প্রতিবেদকদের হাতে আসে আর তাতে উল্লেখ রয়েছে, মাজেদ ফকির হলফ করে বলছেন, ১২৫৫নং দলিল মুলে বাদীর দাবীকৃত ৩৪.৫ শতাংশ সম্পত্তি আমি পূর্বে কখনো দখল করতে যাইনি এবং ভবিষ্যতেও কখনো দখল করতে যাবো না।
এবং এই জমি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞ আদালতের মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে দেয়া হয়। সেখানে পিবিআই এর রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে, বিবাদী মাজেদ ফকির(৬০) গত ১৮/০২/১৯৬০ইং তারিখে ১৭০১নং মিথ্যা/জাল দলিল দিয়ে যে কোন উপায়ে জমির মিথ্যা নামজারী জমাভাগ নিজের নামে করিয়ে জাল দলিল ও নামজারী কাগজ দেখিয়ে বাদীর মাতা সাহেনা বেগমের মালিকানাধীন ও ভোগ দখলীয় জমি দাবী করে মাজেদ আলী ফকির।
এবিষয়ে স্থানীয় খালেক মেম্বার বলেন, মারামারির ঘটনা জানতে পেরে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। তিনি বলেন, তাদের বাড়ির কোন দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়নি আর বাড়ির গরু ছাগলের লোটপাটের বিষয়টি আমি জানিনা।
এবিষয়ে মাজেদ আলী ফকিরের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এই জায়গা খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে নিয়ে আমিই চাষ করতাম। পরে ওদের আমিই থাকতে দিয়েছি। হঠাৎ কথার মাঝখানে মাজেদ ফকিরের কাছ থেকে মুঠোফোনটি নিয়ে নেয় তার ছেলে মুন্না। মুন্না জানান, জায়গাটি নিয়ে আদালতে এখনো মামলা চলমান। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই হৃদয়ে সেখান থেকে মাটি কাটে। তখন বাঁধা দিলে আমার ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে এলাকাবাসী হৃদয়কে ধরে মারধর করে। আমাদের করা মামলায় হৃদয়ের ছোট ভাই এখন জেলে আছে। এসময় হুমকি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।
ভূক্তভোগী পরিবারের মামলা ও ঘটনার বিষয়ে মামলার তদন্তকর্মকর্তা নবাবগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো.মনির হোসেন বলেন, হৃদয়য়ের পরিবারের মামলাটি তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতির অনুমতি পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আসামী পক্ষের নয় জনের মধ্যে ৭ জন জামিনে রয়েছে।