দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি.
বড় ভাইয়ের সাথে জমি সংক্রান্ত ঘটনায় গ্রাম্য বিচারে ১ লাখ টাকা জরিমানা আর জায়গা ছেড়ে দিতে চাপ দেয়া হয় নুরুল হক(৬০)কে। গত মাস দুয়েক আগে এ ঘটনা ঘটে নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনয়িনের মেলেং গ্রামে। এঘটনার জের ধরে শনিবার স্থানীয় কয়েক জন মোড়ল ওই কৃষককে ডেকে নিয়ে স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক সাক্ষর নেয় বলে অভিযোগ নুরুল হকের পরিবারের। সেই চাপ ও ক্ষোভে বিষপান করে নুরুল হক। বিষপানের ৫দিন পর বুধবার দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে সে মারা যায়। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ও স্বজনরা জানায়, গত শনিবার কৈলাইল ইউনিয়নের মেলেং গ্রামে শালিসী বৈঠকে মারপিটের চেষ্টার অভিযোগে মানসিক কষ্টে কৃষক নুরুল হক পাড়াগ্রাম মেয়ের বাড়ি হতে ফেরার পথে পাড়াগ্রাম স্কুল মাঠে বসে বিষপান করে। এসময় স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে তাঁর স্বজনদের খবর দেয়। তারা নুরুল হককে উদ্ধার করে নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঘটনার ৫দিন পর বুধবার দুপুরে সে মারা যায়।
নিহতের বড় মেয়ে নুর নাহার বলেন, তাঁর বাবা গ্রাম্য শালিসী ও তার চাচা মালেকের চাপেই বিষপান করে। তার চাচা মালেক চাচী আসমা জমি দখল করতে প্রতিবেশী মো. লিয়াকত ও গ্রাম্য শালিসী আব্দুর রশিদ আব্দুল কুদ্দুসসহ কয়েকজনকে ডেকে আনে।
এদিকে হাসপাতালে মৃত্যুর আগে নুরুল হক এ ভিডিও রেকডিংয়ে বলেছেন, তার বড় ভাই আব্দুল মালেক লোকজন ডেকে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। নুরুল হককে বাড়ী ছেড়ে দিতে বলেছে। তাই তিনি আর বাঁচতে চান না।
এবিষয়ে গ্রাম্য শালিসী আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা কোনো বিচার করিনি। কয়েক বছর আগে একটা শালিসীতে যে রায় হয়েছে সেটা মেনে নিতে বলেছি। চাপ দেয়ার তো প্রশ্নই উঠে না।
আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নুরুল হকের ভাই মালেকের জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন একটা রায় দিয়ে গেছে। তার কথাটা বাস্তবায়নের জন্য গ্রামবাসী সবাই বলেছি। তবে নুরুল হকের স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার কারণে সে বিষপান করলেও এখন বিষয়টি নিয়ে অন্যদিকে প্রবাহিত করা হচ্ছে। ঘটনার পর হতেই নিহত নুরুর হকের বড় ভাই আব্দুল মালেক ও তাঁর স্ত্রী ঘরে তালা দিয়ে পালিয়েছে। বাড়িতে কাউকেই যাওয়া যায়নি।
এ দিকে বৃহষ্পতিবার বিকেলে নুরুল হকের লাশ গ্রামের বাড়ি পৌছলে স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়। যাদের কারণে বাবা মারা গেছে তাঁদের বিচার চান তার বড় মেয়ে নুর নাহার।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শুনেই পুলিশ নিহতের বাড়ী গিয়ে বিস্তারিত জেনেছে। লিখিত অভিযাগ দিলে মামলা নেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনায় কেউ দোষী থাকলে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।