দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি.
ঢাকার দুই উপজেলা দোহার ও নবাবগঞ্জ। উপজেলা দুটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে এ দুই উপজেলায়। প্রবাসী অধ্যুষিত এই দুই উপজেলায় বর্তমানে মাদক এক ভয়াবহ সমস্যার নাম। বিভিন্ন প্রকার মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে উপজেলায় দুটিতে। বিশেষ করে গত ৫ আগষ্টের পর যেন সহজেই মিলছে মাদক। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকার মাদক। প্রতি দুই কিলোমিটার রাস্তায় একাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। মাদকাসক্তের কারণে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, পারিবারিক কলহ, খুনের ঘটনা বেড়ে চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে সচেতন মহল। বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটছে মারামারি এমনকি খুনের মতো ঘটনা।
পরিসংখ্যান বলছে মাদক ব্যবস্যাকে কেন্দ্র করে নবাগঞ্জের চেয়ে দোহারে খুনের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় দোহার উপজেলার কুসুমহাটি ইউনিয়নের বাবুডাঙ্গী এলাকায় মিন্টু শেখ (২৩) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। যার নেপথ্যে রয়েছে মাদক ব্যবসা। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে খুনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও ঘটেছে মাদক ব্যবস্যাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা। ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে দোহার উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের রুইথা গ্রাম থেকে মো. সেলিম (২৬) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে দোহার থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনেও ছিল মাদক ব্যবস্যা। ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্তারনগর প্রামে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে ইয়ারন বেগম নামে এক নারী নিহত হন। আহত হন তার স্বামী মোতা ও নাতনি রিয়া আক্তার। আহত অবস্থায় ইয়ারনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তবরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারণ হিসেবে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনার পেছনে রয়েছে মাদক সেবন ও বেচাকেনায় বাধা দেয়া। ২০২৪ সালের শেষের দিকে লটাখোলা এলাকায় মাদক নিয়ে দ্বন্দে প্রকাশ্যে খুন হয় এক যুবক।
এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে মাদক ব্যবস্যাকে কেন্দ্র করে মারামারি, ইভটিজিং, পারিবারিক কলহের মতো নানা ঘটনা।
মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নেশার সবধরনের মাদকই পাওয়া যায় এখন দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন মাদকের স্পটে।
দোহার-নবাবগঞ্জে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বাংলা মদসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ। মাদকের ছোবল থেকে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ কেউ বাদ যাচ্ছে না।
দোহার-নবাবগঞ্জের পুরুষ অধিবাসীদের শতকরা প্রায় ৮০ জন প্রবাসী। ছেলে-মেয়েদের উঠতি বয়সে বাবার শাসন থেকে তারা মুক্ত। ছেলে-মেয়েরা তাদের সহজ-সরল মাকে স্কুল-কলেজের বেতন কিংবা পোশাক-প্রসাধনী কেনার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নেশাখোর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠছে। ফলে নিজের অজান্তেই মাদকের বিষাক্ত থাবায় নিজেকে সঁপে দিচ্ছে।
অনুসন্ধানী সূত্রে জানা যায়, দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলায় মাদকের প্রধান স্পট প্রায় ৬০টি। এদের মাঝে ভাসমান স্পটের সংখ্যাই দুই শতাধিক। এসব জায়গায় হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, বাংলা মদ পাওয়া যায়। জানা গেছে মোটরসাইকেল, রিকশা এমনকি চলন্ত ইজিবাইকে ও মাদকের বেচাকেনা হয়ে থাকে। কিছু স্থানে মাদক ব্যবসার পেছনে জড়িত আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক কর্মী। যাদের আশ্রয়-প্রশয়ে গড়ে উঠছে মাদকের নিরাপদ আখড়া।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে যেসব মাদক রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করে এসব ট্রলারঘাট তারই নিরাপদ রুট। দোহার উপজেলার নারিশা ট্রলারঘাট, মৈনট ট্রলারঘাট, বাহ্রা ট্রলারঘাট দিয়ে দোহারে মাদকের বড় বড় সব চালান প্রবেশ করে। এরপর তা ডিলারদের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় সারা দোহারে।
সূত্র আরও জানায়, দোহার উপজেলার মেঘুলা বাজার, জয়পাড়া বাজারের ভূতের গলি, বাহ্রা ঘাট, মৈনট আবাসন প্রকল্প, দক্ষিণ শিমুলিয়া, ঝনকি, কাচারীঘাট, রাইপাড়া, খালপাড়, বৌবাজার, লটাখোলা বিলের পাড়,বাঁশতলা, জামালচর, নিকড়া, রসূলপুর, মাহমুদপুর, অরঙ্গবাদসহ বিভিন্ন স্থানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক সরবরাহ ও বিক্রি করে থাকে।
অপরদিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার এখানকার রুপার চর গ্রামকে মাদকের শহর বলা হয়ে থাকে। কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ এলাকা, বারুয়াখালী, নবগ্রাম,আলালপুর,খানেপুর, পুরাতন বান্দুরা, নতুন বান্দুরা, গালিমপুর, চুড়াইন, আগলা, কৈলাইল, বলমন্তচর, আলগীরচর, আজিজপুর, মাদকের কেনা-বেচা অন্যতম স্পট। কারো কারো কছে এসব এলাকা মাদকের হাট নামেও পরিচিতি রয়েছে বলে জানা যায়। প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান ও তৎপরতা বাড়ালে মাদকের বানিজ্য কমে আসবে এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।