দোহার(ঢাকা)প্রতিনিধি:
দোহারে পাঠ্য তালিকার বাইরে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। তবে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা বলছেন, শ্রেণি কক্ষের শিক্ষকদের নির্দেশে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো,রাকির হাসান বলছেন, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে শিক্ষক এ গাইড কিনতে উৎসাহ বা বাধ্য করছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৫ সালের সিলেবাসের আলোকে গাইড বইয়ের ইংরেজী ১ম/২য় পর্ব এবং বাংলা ১ম/২য় পর্ব লেকচার পাবলিকেশনের নাম দিয়ে হুবহু দুই লেখকের নাম বসিয়ে এসব নিন্মমানের গাইড বই উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো হয়েছে। শিক্ষকদের কাছে জিম্মি শিক্ষার্থীরা, একে পুজিঁ করে উপজেলার মেঘুলা বাজার মোহনা লাইব্রেরী ও জয়পাড়ার প্রানকেন্দ্রে আদর্শ লাইব্রেরী নামে ২টি লাইব্রেরী ও তাদের প্রতিনিধি ইলিয়াছ মিয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিনামূল্যে দেয়া বইয়ের বাইরে চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ট শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি লেকচার প্রকাশনার গাইড বই বিদ্যালয়ে সয়লাভ হয়ে গেছে।এসব গাইড বই উচ্চ দামে এসব লাইব্রেরী থেকে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। লাববান হচ্ছেন অসাধু মোহনা ও আদর্শ নামে দুই লাইব্রেরীয়ান ও সরববাহকারী ইলিয়াছ মিয়া। বই বিক্রয়ের একটা অংশ আগেই পৌছেঁ দেওয়া হয়েছে উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মৌড়া এমদাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়,মধুরখোলা উচ্চ বিদ্যালয়,মুকসুদপুর সামসুদ্দিন শিকদার উচ্চ বিদ্যালয়, সুতারপাড়া একে কিন্ডার গার্ডেন উচ্ছ বিদ্যালয়, আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়,জয়পাড়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই পদ্ধতিতে গাইড বইতে প্রতিবছর মোড়ক পরিবর্তন করে তাতে লেখকের নাম বদলিয়ে নিম্নমানের বই বাজারে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে উল্লেখিত লাইব্রেরীর মালিক ও এজেন্টদের যোগসাজসে স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষকদের মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কিনতে বাধ্য করছে। অভিযোগ রয়েছে এসব গাইড বই যদি কোন শিক্ষার্থী না কিনে থাকে, সেক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাই বাধ্য হয়েই নির্ধারিত লাইব্রেরী থেকে অভিভাবকরা উচ্চ দামে এসব নোট বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে-হাতে লেকচার পাবলিকেশনের নামে ২/৩ লেখকের নামে বিভিন্ন গাইড বই। আর এভাবেই শ্রেণি কক্ষে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপপাশি শিক্ষকদের হাতেও একই চিত্র। শুধু যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তা নয়। উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে রয়েছে এসব নিন্মমানের গাইড বই।
উপজেলার মৌড়া এমদাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়,মধুরখোলা উচ্চ বিদ্যালয়,মুকসুদপুর সামসুদ্দিন শিকদার উচ্চ বিদ্যালয়, সুতারপাড়া একে কিন্ডার গার্ডেন উচ্ছ বিদ্যালয়, আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়,জয়পাড়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিটি শ্রেণি কক্ষের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত লেকচার পাবলিকেশনের নামে নিন্মমানের প্রকাশনার গাইড কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। গাইড নিয়ে বিদ্যালয়ে না আসলে নানা অজুহাতে মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তাই বাধ্য হয়ে গাইড বই নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছি।
এ বিষয়ে লাকি আক্তারসহ একাধিক অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের চাপের কারণে প্রতিটি বিষয়ে একাধিক প্রকাশনার গাইড বই কিনে নিতে হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন সন্তানদের মানসিক চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নিচ্ছে এই লাইব্রেরীর মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক সমিতির নেতা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রকাশনার লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এসব গাইড বই শিক্ষার্থীদের নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
তবে গাইড বইয়ের কথা স্বীকার করে শিক্ষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সৃজনশীল প্রশ্নপত্র হওয়ার কারণে মূলত গাইড বই নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য এসব করা হচ্ছে।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রাকিব হাসান ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুশ শিহার বলছেন,গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে শিক্ষক এ গাইড কিনতে উৎসাহ বা বাধ্য করছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভুমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট তাসফিক সিবগাত উল্লাহ জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা সহযোগীতা চাইলে আমরা অভিযানে নেমে অভিযুক্ত লাইব্রেরীতে রাখা নিন্মমানের গাইড বই জব্দ করবো।পাশাপাশি বিধি মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, শিক্ষকরা অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বাজারের লাইব্রেরীগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।