নবাবগঞ্জ ( ঢাকা) প্রতিনিধি :
ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় সোনাবাজু বাজার এলাকায় কাশিয়াখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে সুইসগেট স্থাপনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড চার পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে ঢাকা পানি উন্নয়ন সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরে।
বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত এই প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার মাননীয় পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশক্রমে পাউবো’র দুই কর্মকর্তা ইছামতি নদীটি পরিদর্শন করেছে। আমরা মনে করি ওখানে স্লুইস গেট হলে ইছামতি নদী আবার আগের রূপ ফিরে পাবে। পরে বুধবার নবাবগঞ্জের স্লুইস গেট প্রকল্পটি এতদিনেও পাস না হওয়ার কারণ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ঢাকা পানি উন্নয়ন সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। ২০১৭ ও ২০১৯ সালে হওয়া প্রকল্পটি বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের সমীক্ষা না থাকায় আটকে যায়। সম্প্রতি তাদের সমীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে।
দোহারের কার্তিকপুরে স্লুইস গেট স্থাপনে দুই সংগঠন নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি ও সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৌশলী সৈকত বলেন, আমরা নবাবগঞ্জের কাশিয়াখালী স্লুইস গেট প্রকল্পের সঙ্গে
দোহারের কার্তিকপুরের ইছামতি নদীও যুক্ত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
এ বিষয়ে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের কাছে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধে স্লুইসগেট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি। তারা আমাদের দাবিটি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন, মূলত বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের সমীক্ষা না থাকায় ২০১৭ ও ২০১৯ সালের গল্পটি পাস হয়নি। তবে জানতে পেরেছি সম্প্রতি ৮ কোটি টাকা খরচ করে এ সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছো।
প্রতিবেদনে যা বলা হয়ঃ
ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলাধীন কাইসাখালী এলাকায় ইছামতি নদীর উৎস মুখ পদ্মা নদী হতে উৎপত্তি হইয়া ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পদ্মা নদীতে বন্যা হলে ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। ইছামতি নদীতে সৃষ্ট অতিরিক্ত প্রবাহের ফলে বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন দেখা দেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪-৯৫ সালে ইছামতি নদীর উভয় পাড়ের বিভিন্ন স্থানকে বন্যা ও প্রবল নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মাণ করা হয়। বাধ নির্মাণকালে কার্তিকপুর এবং কাইসাখালী নামক স্থানে দুইটি ক্লোজার নির্মানের মাধ্যমে ইছামতি নদীর সাথে পদ্মা নদীর সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকা বন্যা ও প্রবল ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য কাশিয়াখালী হতে কামারগাঁও পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর বরাবর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন খালের মুখে রেগুলেটর নির্মাণ করার নির্দেশনা থাকলেও প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে তা তখন করা সম্ভব হয় নাই। ফলে ইছামতি নদী ও প্রকল্পের এলাকার বিভিন্ন খালে পানি প্রবাহ দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকায় পানি দূষিত হয়ে পড়েছে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকালে যে বৃষ্টিপাত হয় তা ইছামতি নদী ও বিভিন্ন খালের পানি পরিশোধনের জন্য যথেষ্ট নয়। উপরন্তু ইছামতি নদী ও সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়ভাবে অপরিকল্পিতভাবে ক্রস-ড্যাম নির্মাণ, খালের অফটেক ও আউটফল বাড়ীঘর, গাছপালা, বাজার ও রাস্তা দ্বারা বন্ধ করা এবং প্রকল্প এলাকার অনেকগুলি খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মান করার ফলে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে জলাবদ্ধতা ও পানি দুষন আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি দুষনের কারনে চাষাবাদ, মৎস চাষ, জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধনের জন্য “আড়িয়াল বিল এর সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ও ইছামতি নদীর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্প বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০১৬ সালে গ্রহণ করা হয়। উক্ত প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বোটপাসসহ কার্তিকপুর এবং সোনাবাজুবাজার নামক স্থানে দুইটি সুসগেট নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছিল, যাতে করে পদ্মা নদী হতে সারা বছর ইছামতি নদীতে পানি প্রবাহিত হতে পারে এবং নৌ চলাচল করতে পারে। উক্ত প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্প এলাকার ঘরবাড়ী, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষা করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকায় পদ্মা নদীর পানি প্রবেশ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতার অবসান। উল্লিখিত উদ্দেশ্যেসমূহ বাস্তবায়নের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত ডিপিপি ২০১৬ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। ২০১৭সালের ৯ই আগস্ট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি যাচাই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালর সেপ্টেম্বর মাসে যাচাইসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পূর্নগঠিত ডিপিপি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। অতপর ২০১৯ সালের ১৩ই নভেম্বর পুনরায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের যাচাই সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত যাচাই সভার কার্যবিরণীতে কয়েকটি সুপারিশসহ পুর্নগঠিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক ডিপিপি পূর্নগঠন করা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার উর্দ্ধে প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পে সমীক্ষা রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২১শে মার্চ বাংলাদেশ পানি বোর্ড ঢাকা জেলার অন্তর্গত ইছামতি নদী অববাহিকার সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের পারফর্ম ফর ফিজিবিলিটি স্টাডি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা প্রদান করা হয় যে, উক্ত এলাকায় বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক “আড়িয়াল বিল এলাকার জীবনযাত্রার মান এবং পানি ও ভূমি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সমীক্ষা” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্প চলমান থাকায় বাপাউবো কর্তৃক প্রস্তাবিত সমীক্ষা প্রস্তাবটি অনুমোদন করা যায়নি। ফলে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।