1. info@asiabarta.news : এশিয়া বার্তা :
অভ্যুত্থান কিন্তু সহজ ছিল না, ৫ই আগস্ট হোক দেশ গড়ার শপথের দিন - এশিয়া বার্তা
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা:
জরুরী নিয়োগ চলছে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি,নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন: বার্তা বিভাগ-০১৭১৬৫৫৯১৯০

অভ্যুত্থান কিন্তু সহজ ছিল না, ৫ই আগস্ট হোক দেশ গড়ার শপথের দিন

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৪১ বার পড়া হয়েছে

গতকাল রাতে ভয়াবহ জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি নাটক দেখলাম। নাটকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক শিক্ষার্থীর ওপর পৈশাচিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে সে সময়ের শহরের অলি গলি-জনপদের অবস্থা।
আমার কাছে মনে হয়েছে নাটকটিতে প্রকৃত পরিস্থিতিটা ফুটে উঠেছে। তবে যারা সেদিন স্বচক্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের এমন চিত্র দেখেননি তারা ততটা অনুধাবন করতে পারবেন না। সেদিন ফ্যা সি স্ট হাসিনার নির্দেশ নিজ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজ দেশের নিরীহ মানুষের উপর স্টিমরোলার চালিয়েছে। অথচ কিছু রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা, সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি এখন সেই পরিস্থিতিতির কথা ভুলে গিয়ে নিজের স্বার্থের জন্য সুবিধাবাধী নানা কথা বলছেন। যেসব নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বড় বড় কথা বলতেন, তারা আজ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সদস্য। একটা প্রতিবেদন দিতে ছয় মাস পার করেছেন। বর্তমান সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের কেউ কেউ নিজের আখের গেছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। বিতর্কিত করে তুলছেন ছাত্র আন্দোলনের স্প্রিডকে।
অথচ ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের দিন সকালেও সারা দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল। আগে থেকেই কার্ফু জারি করা ভোর সকালে কেরানীগঞ্জ কদমতলী যেন যুদ্ধক্ষেত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাস্তায় বন্দুক তাক করে গুলি করার পজিশন নিয়ে ছিলেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডার বাহিনীও ছিলেন লাঠিসোটা নিয়ে প্রস্তুত। একজন প্রবাসী মাইক্রোবাসে করে এয়ারপোর্টে যাচ্ছিলেন। কদমতলী গোল চত্বরে আসা মাত্র তার গাড়ি আটকে দেয়। পুরো গাড়ি তন্ন তন্ন করে সব কিছু সার্চ করে। গাড়িটি বাবু বাজার ব্রিজে উঠতে কয়েক দফা তল্লাশীর স্বীকার হন। ওই প্রবাসী চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি প্রবাসী, আমাকে তারাতারি যেতে দিন? আমার সময় নাই। ফ্লাইট মিস করব। সেদিন শুধু তিনিই হয়রানির স্বীকার হননি। সাংবাদিকদের পর্যন্ত ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি। কার্ফু পাস থাকার পরেও সেদিন কয়েকদফা চেষ্টা করেও বাবু বাজার ব্রিজ দিয়ে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমার গলার আইডি কার্ড দেখে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী বলতে থাকে একে যেতে দিয়েন না।

মানবজমিন সাংবাদিক আমাদের বিরুদ্ধে, ছাত্রদের পক্ষে। পরে গলার আইডি কার্ড খুলে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে পার হওয়ার জন্য চেষ্টা করি। সেখানেও ছিল আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধা। পরিচয় গোপন করে হাসপাতালের কথা বলে বহু কষ্টে নদী পার হই। পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখি এক রিক্সায় রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ এক ছাত্র। পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিতে বাঁধা দিচ্ছেন। এবার আমি আইডি কার্ড গলায় পড়ে রিকশায় উঠি। চালককে বলি রিকশা চালান। কিছুটা পথ যেতেই প্রথমে পুলিশের বাঁধা। এরপর আবার ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী গতিরোধ । অনেক অনুনয় বিনয়ের পর ছেড়ে দেন। চলে যাই মিটফোর্ড হাসপাতালে।
আগের দিন ৪ আগস্ট সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ একজন শিক্ষার্থী জগন্নাথের সামনে ভিডিও করছিল। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। এর কিছুক্ষণ পর হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার নেতৃত্ব কিছু শিক্ষার্থী কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ( সম্ভবত গায়েবানা জানাযা কর্মসূচি) পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে বাঁধা দেয়। আন্দোলনকারীরা বলতে থাকেন হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করতে দিন, না হয় গুলি করে মেরে ফেলুন। বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। শুরু হয় লাঠি চাঁর্জ, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ।
দুপুরের দিকে বাড়তে থাকে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা জুড়ে ছাত্র জনতার অবস্থান। একপর্যায়ে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে থাকে নিরস্ত্র এসব জনতার ওপর। পুলিশ একদিকে গুলি করতে করতে অগ্রসর হয়, আরেক পাশ দিয়ে অকুতোভয় ছাত্র জনতা ইট পাটকেল নিয়ে বিরের দর্পে অগ্রসর হতে থাকে। হঠাৎ পুলিশের গুলিতে দেখা গেল তিন জন রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল। শিক্ষার্থীকে তাদেরকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য তার কাছে যায়। আমিও দ্রুত ছবি তুলতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ বৃষ্টর মতো টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। ধোয়ায় কোন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যে যার মত চোখ কচলাতে কচলাতে কেনো মতে শুটকে পড়েন। আমিও ন্যাশনাল মেডিকেলের গলি দিয়ে ঢাকা জজ কোর্টের গেটের কাছে আসি। এসে দেখি গেট তালা। একটু দূরে কোর্টের এক পরিচিত কর্মকর্তাকে বলে ভিতরে প্রবেশ করি। সেদিন ওই এলাকার বাসা বাড়ির লোকজনও কাঁদানো গ্যাসের শিকার হয়েছিলেন। এলাকার লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন
কিন্তু কিছু বদনাইশ আজ সেই দিনের দৃশ্য ভুলে গেছে। এখন চলছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। সব ক্রেডিট নিতে মরিয়া এখন কিছু সমন্বয়ক। সমন্বয়কের নামে আবার কেউ কেউ চাঁদাবাজি করে ধরাও পড়ছে। আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়ে বলছেন, লোভ সামলাতে পারিনি।
রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু হাইব্রিড নেতারাও আখের গোছাতে মরিয়া। ব্যস্ত চাঁদাবাজিতে। অল্প সংখ্যক হলেও কিছু ইসলামী দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে। আশা দিক হলো এদের বিরুদ্ধে সব দলই কমবেশি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তারপরে দমন করা যাচ্ছে না। কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারাতো জনগণের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছেন।
আজও ভয়াল আগস্টের মর্মান্তিক কিছু দৃর্শ্য মনে হলে আতকে উঠি। সেদিন ভেবেছিলাম রাজনৈতিক নেতারা দেশ প্রেমিক নেতায় পরিণত হবেন। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে অতন্ত প্রহরির ভূমিকা পালন করবেন। কিছু উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণে আরো বেশি আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে তাদের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তারাও আসলে চান না সুন্দর বাংলাদেশ হোক। একজন উপদেষ্টাতো ঠিকমতো হাঁটাচলাই করতে পারেন না। অথচ তিনিও নামটাওয়াস্তে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

এখনো সময় আছে সুন্দর দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে হবে এগিয়ে যাওয়ার। শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় পর্যন্ত ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের দল ও ছাত্র সংগঠন বছর না যেতেই বিভেদে জড়িয়ে পড়েছেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে যা করা মোটেও উচিত না তাও করছেন। তারা এখন জুলাই আগস্টের অত্যাচারের কথা ভুলে গেছেন।
সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা স্থায়ী স্বাধীনতায় পরিণত করা যাচ্ছে না। দেশটা আবার ধীরে ধীরে খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে বড় ছোট সব রাজনৈতিক দল, বর্তমান সরকার, প্রশাসন ও জনগণ সমানভাবে দায়ী। আজ আপার পালিয়ে যাওয়ার দিন। তবে এতোটা সহজ ছিলো না ফ্যাসিবাদ মুক্ত হওয়ার। অনেক রক্ত, আর জীবনের বিনিময়ে আজকের এই দিনটি। দেশের আকুতোভয় ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে দিন সাড়া দিয়েছিল দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ। আর কখনো কারো ডাকে সাড়া দিবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সবার মনে রাখা উচিত এটা ভুলে গেলে এ জাতির পরিণতি খুবই খারাপ হবে।

রাশিম মোল্লা
সিনিয়র রিপোর্টার
মানবজমিন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares
আরো সংবাদ পড়ুন

আর্কাইভ | পুরাতন সংবাদ পড়ুন

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: 𝐘𝐄𝐋𝐋𝐎𝐖 𝐇𝐎𝐒𝐓