দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ:
বিএনপি একটি পুরোনো দল। দলের অনেক নেতা অর্থের প্রভাবে রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারা যথাযথ সম্মান পাচ্ছে না। এমন মন্তব্য করেছেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতাউর রহমান আতা। শনিবার সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার জয়রাতে নিজ বাসভবনে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির ফরম বিতরণের সময় সাটুরিয়া থানা এলাকার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আতাউর রহমান বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় ও দীর্ঘদিনের দল। ১৯৭৭ সালে জাগো দল গঠিত হয়েছিল, পরবর্তীতে যা থেকে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয়তাবাদী দল গঠন করা হয়। এই দীর্ঘ পথচলায় অনেক বিত্তশালী বিএনপিতে এসেছে। কিন্তু তারা কখনোই সামনের সারিতে এসে পুলিশের মোকাবেলা করেনি, গ্রেপ্তার হননি বা তাদের নামে কোনো মামলাও হয়নি। তারা এই দলের বড় নেতা হয়েছে। আমরা যারা দলের শুরু থেকে আছি, শহীদ জিয়ার হাত ধরে জাগো যুবদল, জাগো দল, ইয়ুথ কমপ্লেক্স করেছি, শহীদ জিয়ার সাথে খাল কেটেছি, আজ আমরা অবহেলিত। শহীদ জিয়া মানিকগঞ্জের বুকে ১৭ বার এসেছেন। আমরা নবগ্রামে, উকিয়ায় এবং ঝিটকা হাই স্কুলে তার সাথে খাল কেটেছি। সেই রাতে তিনি আমাদের সাথে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গান গেয়েছিলেন।’
এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘শহীদ জিয়ার কথায় আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। সেদিন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমি তাকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। বিএনপি গঠনের পর থেকেই তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। শহীদ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল না, ঘরে রান্নার চালও ছিল না। সেই জিয়ার আদর্শকে লালন করে আমরা দল করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে, ৯০ এর এরশাদ হটাও আন্দোলনের পর থেকে দলে অনেক বিত্তশালী শিল্পপতি ঢুকেছে। তাদের অনেক উচ্চ অভিলাষ। তারা কখনোই মাঠে রাজনীতি করে না, পুলিশের মোকাবেলা করে না। কিন্তু তারা অর্থের প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে।’ আতাউর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় নেত্রী ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেদিন ঢাকার রাজপথে নেত্রীর পাশে থাকার জন্য মানিকগঞ্জের অনেক নেতাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা পালিয়ে কেউ লন্ডন, কেউ কানাডা চলে গিয়েছিল। সেদিন ৭ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল সাহেব আমাকে ডেকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে মানিকগঞ্জের লোকজন ও সাটুরিয়ার বিশাল বাহিনী নিয়ে ঢাকার রাজপথে নেত্রীর পাশে ছিলাম।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ কেন সদস্য নবায়নের জন্য আলাদা কর্মসূচি পালন করতে হয়? আমার নেতাকর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে, এরা আতার লোক, এদের সদস্য নবায়ন করো না। আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, মানিকগঞ্জের শতকরা ৮০ জন জনগণ আমাকে ভালোবাসে।’
এসময় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডক্টর জহিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী, জেলা টিসিবি পণ্য ডিলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সদর থানা কৃষক দলের সাবেক সদস্য সচিব পল্টু মিয়া, জেলা বিএনপি নেতা ফরিদুজ্জামান ফরিদ, সদর থানা বিএনপির উপপ্রচার সম্পাদক লায়ন মিলন ইসলাম, সাবেক কৃষকদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান রবিন, সাটুরিয়া উপজেলা কৃষক দলের সাবেক আহবায়ক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।