দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ:
জনগণের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তার উপর দোচালা টিনের ঘর তুলে বন্ধ করে রেখেছে পতিত হাসিনা সরকারের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান সাইদুর রহমান ও হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গুলজার হোসেন বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে এলাকাবাসী দাবি করছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় ওই অঞ্চলের কমপক্ষে ছয়টি গ্রামের ৩০ হাজারের ও বেশি মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) আগস্ট সকালে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা ওই দোচালা টিনের ঘর অপরসারণ ও অবিলম্বে রাস্তা নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় নারী শিশুসহ শতশত গ্রামবাসী ‘রাস্তা চাই’ ‘রাস্তা চাই’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের উত্তর চাঁনপুর রতনদিয়া মোজার রাস্তাটি ইউনিয়নের বরুনা, উত্তর চাঁনপুর চাঁনপুর, রতনদিয়া, কল্যাণপুর ও সাপাইর এই ছয়গ্রামের যাতায়াতের একমাত্রয রাস্তা। রাস্তাটি উত্তর চানপুর গ্রামের আওয়ামী লীগের দোসর জনৈক শামসুল হক ব্যাপারী দোচালা টিনের ঘর তুলে বন্ধ করে দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চালা ইউনিয়নের উত্তর চাঁনপুর, কল্যাণপুর ও সাপাইর গ্রামের মানুষদের একমাত্র রাস্তাটি একটি দোচালা টিনের ঘর দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে এই রাস্তায় দিয়ে একজন করে মানুষ কষ্টে যাতায়াত করতে পারছে। কোনো ধরনের গাড়ি বা রিকশা-ভ্যান চলাচল করতে পারছে না। উত্তর চাঁনপুর রতনদিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাসান মুন্সি বলেন, আমরা উত্তর চাঁনপুর রতনদিয়া গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংকটে ভুগছি। শামসুল হক মোল্লা রাস্তাটি বন্ধ করে রেখেছে। সে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছের লোক হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাই না।
তিনি বলেন, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি অর্থে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হলেও সেই রাস্তার মুখে একটি দোচালা ঘর তুলে আমাদের যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। মাঝে মাঝে তারা রাত-দিনে রাস্তার মাটি কেটে রাস্তা ধ্বংস করারও চেষ্টা করছে। ঘরটি অপসারণ করা এখন বিশেষ প্রয়োজন। আমরা মামলা-মোকদ্দমা চাই না, শুধু চলাচলের জন্য রাস্তা চাই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শামছুল বিশ্বাস এই ঘর তুলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।
কালাম শেখ বলেন, চাঁনপুর ও রতনদিয়ার রাস্তাটি বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যেই বিনা চিকিৎসায় দুইজন মারা গেছে। অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় তাদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় নারী হালিম বলেন, রাস্তা ভালো না থাকার কারণে এলাকার অনেক মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। ছেলেরা মেয়ে দেখতে এসে বলত এই এলাকায় রাস্তা-ঘাট নেই, আমরা এখানে বিয়ে করব না। পরে আমরা নিজেরা রাস্তা করার পর কয়েকটি মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন আবার রাস্তাটির মুখে ঘর তুলে বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃষক মোঃ খালিল বলেন, আমরা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এই রাস্তা বন্ধ থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কার্যত জলাবদ্ধ অবস্থায় আছি। রাস্তায় ঘর তুলে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। গতকালও আমি ছয় মণ পেঁয়াজ নিয়ে যেতে গিয়ে রাস্তার মাটি কেটে সমান করেছি। আমাদের কষ্ট দেখে তারা হাসে। আমরা কিছু চাই না, শুধু একটি রাস্তা চাই। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শামসুল হক মোল্লা বলেন, এই জায়গাটুক আমার প্রবাসী ভাতিজা লাভলুর মালিকানায়। তার নিজের জায়গায় দোচালা টিলের ঘর তুলেছি। ওইসব গ্রামের মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, জনগণের চলাচলের রাস্তার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারকে ঘর সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আজকের মধ্যে ঘর সরিয়ে না হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।