দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জে এক তথাকথিত কবিরাজ তার প্রতারণার মাধ্যমে একের পর এক মানুষকে বিপদে ফেলছে। সর্বশেষ, ‘কালীর মাথা’ আনার প্রলোভন দিয়ে এক যুবককে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর আগেও তার অপচিকিৎসায় আরেক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ঘিওর উপজেলা সদরের ঠাকুরকান্দি গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মাসুদ একসময় কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। এখন তিনি নিজেকে পুরোদস্তুর কবিরাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নানার কবিরাজি নাম ভাঙিয়ে ও কিছু দালাল দিয়ে তিনি তার প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন। প্রেমে বাধা, পাওনা টাকা উদ্ধার, জিন-ভূতের চিকিৎসা—এমন কোনো সমস্যা নেই, যার সমাধান তিনি দেন না। গম্ভীর কথাবার্তা আর সাধুর মতো আচরণ দিয়ে তিনি এলাকার সহজ-সরল মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও ফাঁদে ফেলছেন। ঠাকুরকান্দি গ্রামের যুবক ইমন কাজী (২২) প্রায় পনেরো থেকে বিশ দিন আগে হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। মাঝে মাঝেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে ইমন তার পরিবারের কাছে জানান, মাসুদ কবিরাজ তাকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘কালীর মাথা’ আনতে বলেছিলেন। গভীর রাতে একা একা মন্দির থেকে কালীর মাথা আনতে গিয়ে তিনি প্রচণ্ড ভয় পান। এরপর থেকেই তার এমন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়েছে।
ইমনের বাবা রহিম কাজী জানান, এই ঘটনা জানার পর তিনি স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মাসুদকে আটক করেন। মাসুদ তার অপকর্মের কথা স্বীকার করে ইমনের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে দেড় লাখ টাকা দেন।
ইমনের বোন উর্মি আক্তার জানান, তার ভাই এখন কিছুটা সুস্থ হলেও এখনো একা থাকতে পারেন না। কারো চোখের দিকে তাকাতে ভয় পান। তিনি বলেন, মাসুদ কবিরাজ এর আগেও তার ভাইকে দিয়ে নানা কাজ করিয়েছেন। একই গ্রামের আলামিন নামের আরেক যুবককেও মাসুদ কবিরাজ ‘কালীর মাথার সিঁদুর’ আনতে বলেছিলেন। সেই যুবকও ইমনের মতোই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত মাসুদ কবিরাজ বলেন, “আমি জিন-ভূতের চিকিৎসা করি। নানার কাছ থেকে কবিরাজি শিখেছি। কাউকে আমি জোর করে চিকিৎসা দেই না। লোকজন আমার কাছে নিজে থেকেই চিকিৎসা নিতে আসে।”
এ বিষয়ে ঘিওর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কোহিনুর মিয়া বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।