নিজস্ব প্রতিনিধি.
মশার নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র হচ্ছে ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া খাল। প্রতি বছর মৈনট ঘাট এলাকার পদ্মার পানি প্রচন্ডবেগে জয়পাড়া খাল হয়ে নবাবগঞ্জের ইছামতি নদীতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু এ বছর পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করেছে জয়পাড়া বাজার সংলগ্ন খালের কচুরিপানার স্তুপ। শুধু পানি প্রবাহেই বাধা সৃষ্টি করছেনা, মশা প্রজননের নিরাপদ স্থান হচ্ছে এই কচুরিপানা। সন্ধ্যা হলেই বাসা বাড়িতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অবিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক ।
এলাকাবাসীর দাবি কচুরিপানার এই স্তুপ অপসারণ করা গেলে সুফল পাবে এলাকাবাসী। জয়পাড়া খালের অন্যত্র ও ইছামতি নদীতে আটকে থাকা কচুরিপানা অনায়সে অপপসারণ হবে। বিশেজ্ঞদের দাবি, মশার প্রকোপও অনেকাংশে কমে যাবে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মশা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড কবিরুল বাশর বলেন, মশা উৎপাদনের নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র হচ্ছে কচুরিপানা। এখানে জন্ম নেয়া মশার কামরে গোদ রোগ হওয়ার সম্ভনা থাকে। শরীরের পা অস্বাভাবিক ফুলে যায়। এ থেকে রেহাই পেতে হলে দ্রুত কচুরিপানা অপসারণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, বুধবার আমরা জয়পাড়া খালটি পরিদর্শন করেছি। অল্প একটু জায়গা জুড়ে আটকে আছে কচুরিপানা। কিন্তু এগুলো অপসারণে উপজেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই নেই। এলাকাবাসী কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলেরও কোনো ভূমিকা নেই। অথচ ঢাকার বাইরে বেশ কিছু স্থানে বিএনপি- জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন এলাকার নানা সমস্যা সমাধানে প্রশংসনীয় নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছে।
তিনি জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জে বিএনপির স্বেচ্ছাশ্রমে বেহাল রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। সংগঠনটি সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতেই এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। একইভাবে ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ চট্টগ্রাম নগরীর একটি খালের প্রাণ ফেরাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামী। জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বাকলিয়ায় বির্জা খাল পরিচ্ছন্ন করার জন্য জামায়াতের এ উদ্যোগ নিয়ে এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তবে জনবান্ধব এমন কর্মসূচি পালনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে দোহার নবাবগঞ্জ বিএনপি জামায়াতের।
ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারে অবস্থিত ইছামতি নদী। একসময় এই নদীই ছিল এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌযান। ঢাকার সদরঘাট থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ও হাসনাবাদ পর্যন্ত চলতো বড় বড় স্ট্রিমার ও লঞ্চ। জয়পাড়া খাল দিয়েও চলত বিভিন্ন নৌযান। কিন্তু পানি না থাকায় এখন চলেনা তেমন কোনো নৌযান।
জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে ইছামতি নদীর উৎপত্তিস্থল কাশিয়াখালীতে দেয়া হয় অপরিকল্পিত একটি বাঁধ। মূল অংশে স্লুইস গেট না দেয়ায় ইছামতি নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কচুরিপানার অপরিসীম দুর্ভোগ। প্রতিবছর দুই উপজেলাবাসীকে নানা দুর্ভোগ ভোগ করতে হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে কচুরিপানা পচে যাওয়ায় কৃষিকাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না ইছামতী নদীর পানি। নষ্ট পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নদী পাড়ের লোকজন। এতে ইছামতি পাড়ের অন্তত পাঁচ ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সংস্কারের অভাবে পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযোগ জয়পাড়া খালও এখন মৃতপ্রায়। এখন বর্ষা মৌসুমেও আগের মতো পদ্মার পানি জয়পাড়া খাল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, কচুরিপানার কারণে ইছামতিতে বর্ষা মৌসুমেও নৌযান চলাচল করতে পারে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় যখন কচুরিপানা পচে পানি নষ্ট হয়ে যায় তখন মাছগুলোও মারা যায়। পচা কচুরিপানার দুর্গন্ধে একদিকে বসবাস যেমন মুশকিল হয়ে যায়, তেমনি এই পানি পরিণত হয় মশার প্রজননক্ষেত্রে। উপজেলার বাগমারা থেকে কাশিয়াখালী এবং বান্দুরা থেকে কার্তিকপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার অংশজুড়ে জন্মেছে ঘন কচুরিপানা। কচুরিপানার কারণে কোথাও পানি দেখারও উপায় নেই।