দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শর্বরী দে’র বিরুদ্ধে সরকারি ডিউটি চলাকালীন সময়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি ডিউটি ফাঁকি দিয়ে জয়রা এলাকার মেডিনোভাসহ বাসস্ট্যান্ডের দু’টি হাসপাতালে নিয়মিত অনকলে রোগী দেখেন। এতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৯টায় ডা. শর্বরী দে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন মেডিনোভা হাসপাতালের ২১০ নম্বর আল্ট্রা রুমে রোগী দেখছেন। রুমের বাইরে আরও কয়েকজন রোগী আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য অপেক্ষা করছেন। একই সময়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার নির্ধারিত ১৫৯ নম্বর রুমের সামনে টিকিট হাতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা ভুক্তভোগী রোগীরা জানান, তারা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ডা. শর্বরীর জন্য অপেক্ষা করছেন, কিন্তু তিনি এখনো হাসপাতালে আসেননি। কখন আসবেন, সে বিষয়েও কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
মিতু আক্তার নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, “দুই দিন আগে (শনিবার) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানতে পারি ডাক্তার আসবেন না। আজকে সকাল ৯টায় এসেছি, এখন ১০টা বেজে গেছে, তবুও হাসপাতালে ডাক্তার আসেননি। এখন শুনতেছি তিনি প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখতেছেন।” প্রিয়া আক্তার নামের আরেক রোগী বলেন, “এই বৃষ্টির ভেতরে অর্ধেক ভিজে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি তাও এক ঘণ্টা হয়ে গেছে। এখনও ডাক্তার আসেননি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শর্বরী দে বলেন, “আমার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে মেডিনোভা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। পরে তাদের অনুরোধে একজন রোগীর টিবিএস আল্ট্রা করেছি।” তবে তিনি মেডিকেল কলেজের ডাক্তার বাদ দিয়ে কেন এই হাসপাতালে এসেছেন, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
মেডিনোভা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন মিয়া বলেন, নিয়মিত নয়; ডাক্তার শর্বরী মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে রোগী দেখেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ডাক্তারদের ডিউটি টাইম। ডা. শর্বরীর বিষয়ে তিনি কলেজ শাখায় কথা বলার পরামর্শ দেন।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ডা. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, “পরিচালক এবং প্রিন্সিপাল মিলেই এসব অনিয়মের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাক্তার শর্বরী দে অফিস টাইমে প্রাইভেটে রোগী দেখে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ডা. শর্বরী দে’র বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন এবং রোগীদের অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে ভুক্তভোগী রোগীদের প্রত্যাশা।